পবিত্র উমরাহ পালনের সুবিধাজনক সময়

মুসলমানদের জন্যে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ আমলের মধ্যে উমরাহ একটি। এই আমলটি দৈনন্দিন অন্যান্য আমল থেকে ভিন্ন। এটি পূর্ণ করার জন্যে মক্কায় গমন করতে হয়, এজন্যে অর্থনৈতিক সামর্থ্য থাকা আবশ্যক। যদিও উমরাহ সারা বছরই পালন করা যায়, তবে আবহাওয়া ও অন্যান্য জিনিসের উপর বিবেচনা করে উমরাহ পালনের জন্যে কিছু সুবিধাজনক সময় আছে, যেমন পবিত্র রমাদান মাস। এই লেখার মাধ্যমে উমরাহ পালনের সুবিধাজনক সময় নিয়ে আলোচনা করা হবে।

হোম
ব্লগ

উমরাহ কি?

উমরাহ শব্দের শাব্দিক  অর্থ হল ইচ্ছা ও ভ্রমণ। পবিত্র কাবা শরীফে গিয়ে তাওয়াফ ও সাঈর মত কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দিষ্ট কাজ করাকে উমরা বলা হয়।

উমরাহ যেভাবে শুরু হলো

মহা পবিত্র কাবা ঘর নির্মাণ হবার পর মহান রাব্বুল আলআমিনের নির্দেশে হযরত ইবরাহীম ও ইসমাইল (আঃ) হজ ও উমরাহ পালনের নিয়ম শুরু করেন।

উমরাহ পালন করার কারন

পবিত্র কুরআনে আল্লাহতাআলা এরশাদ করেন –

وَأَتِمُّوا الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لِلَّهِ আর তোমরা আমার (আল্লাহ্‌’র) উদ্দেশ্যে হজ ও উমরাহ পরিপূর্ণ ভাবে পালন কর। (সূরা বাকারা: ১৯৬)

হাদিসে বর্ণিত আছে-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ الْعُمْرَةُ إِلَى الْعُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُمَا وَالْحَجُّ الْمَبْرُورُ لَيْسَ لَهُ جَزَاءٌ إِلاَّ الْجَنَّةُ আবু হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল উল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন – এক উমরাহ এর পর আর এক উমরাহ’র মধ্যবর্তী সময়ের (গুনাহ’র) জন্যে কাফফারা। হজে মাবরুরের প্রতিদান হলো জান্নাত। (সহীহ বুখারীঃ ১৭৭৩)

Why keeping umrah

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ تَابِعُوا بَيْنَ الْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ فَإِنَّهُمَا يَنْفِيَانِ الْفَقْرَ وَالذُّنُوبَ كَمَا يَنْفِي الْكِيرُ خَبَثَ الْحَدِيدِ وَالذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَلَيْسَ لِلْحَجَّةِ الْمَبْرُورَةِ ثَوَابٌ إِلاَّ الْجَنَّةُ ‏”‏ প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেন, তোমরা নিয়মিত হজ ও উমরাহ পালন করতে থাকো। দরিদ্রতা ও গুনাহ দূর করে দেয় এই দুটি আমল। ঠিক যেমনভাবে উত্তপ্ত আগুন লোহা ও সোনা-রুপার ময়লা-মরিচিকা দূর করে দেয়। জান্নাতই হলো একটি কবুল হজের উত্তম প্রতিদান। আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। (সুনান আত তিরমিযীঃ ৮০৮)

কয়বার উমরাহ করেছেন রাসূল (সা.)?

حَدَّثَنَا قَتَادَةُ، قَالَ قُلْتُ لأَنَسِ بْنِ مَالِكٍ كَمْ حَجَّ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم قَالَ حَجَّةٌ وَاحِدَةٌ وَاعْتَمَرَ أَرْبَعَ عُمَرٍ عُمْرَةٌ فِي ذِي الْقَعْدَةِ وَعُمْرَةُ الْحُدَيْبِيَةِ وَعُمْرَةٌ مَعَ حَجَّتِهِ وَعُمْرَةُ الْجِعِرَّانَةِ إِذْ قَسَّمَ غَنِيمَةَ حُنَيْنٍ ‏.‏ কাতাদা (রহ.) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতবার হজ করেছেন? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) একবার হজ এবং চারবার উমরাহ করেছেন। তিনি উল্লেখ করলেন যে, একবার উমরাহ করেছিলেন যিলকাদ মাসে, একবার হুদায়বিয়ার উমরাহ, একটি হজ্জের সাথে উমরাহ এবং জি’ইররানা থেকে আরেকটি উমরাহ, যখন তিনি হুনায়ন যুদ্ধে অর্জিত সম্পদ বন্টন করেছিলেন। (সুনান আত-তিরমিজি: ৮১৪)

আমাদের প্রিয় রাসূল (সা.) এর প্রথম উমরাহ

হিজরতের ষষ্ঠ বছরে প্রিয় নবী (সা.) স্বপ্নে দেখেন, তিনি সাহাবাদের সাথে ইহরাম বেঁধে উমরাহ’র জন্য মক্কায় প্রবেশ করছেন। নবীদের স্বপ্ন সত্য। এই সংবাদে সাহাবারা উমরাহ’র .জন্য উৎসাহী হয়ে ওঠেন। তাদের উৎসাহ দেখে রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি ৪০০ সাহাবিকে নিয়ে জিলকদ মাসে উমরার উদ্দেশ্যে রওনা দেন এবং হুদাইবিয়া নামক স্থানে অবস্থান করেন।

এসময় মক্কার মুশরিকরা মুসলিম কাফেলাকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়। রাসূল (সা.) সংঘাত এড়ানোর জন্যে হুদাইবিয়ায় মুশরিকদের সাথে চুক্তি করেন। এ চুক্তিতে ঘোষণা করা হয়, এ বছর মুসলিমরা ফিরে যাবে এবং আগামী বছর তারা তিন দিনের জন্য মক্কায় প্রবেশের অনুমতি পাবে। ফলে রাসূল (সা.) এবং সাহাবারা হুদাইবিয়ায় ইহরাম ত্যাগ করেন। এটাই ছিল নবী (সা.) এর প্রথম উমরাহ।

উমরাহর হুকুম

عَنْ جَابِرٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم سُئِلَ عَنِ الْعُمْرَةِ أَوَاجِبَةٌ هِيَ قَالَ ‏ “‏ لاَ وَأَنْ تَعْتَمِرُوا هُوَ أَفْضَلُ ‏”‏ ‏ জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উমরাহ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, এটি কি বাধ্যতামূলক? তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, না, তবে উমরাহ করলে ভালো। (সুনান আত-তিরমিজি: ৯৩৩)

এ হাদিস থেকে আমরা বুঝতে পারি, যাদের অর্থনৈতিক সামর্থ্য আছে তাদের জন্য উমরাহ করা উত্তম ইবাদাত।

উমরাহ পালনের সুবিধাজনক সময়

বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে, উমরাহ পালনের জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক সময় হল নিম্নরূপ:

আবহাওয়া বিবেচনায়: মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সৌদি আরবে প্রচণ্ড গরম থাকে, তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এই তীব্র গরম বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের হাজীদের জন্য সহ্য করা কঠিন হতে পারে।

নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সৌদি আরবের আবহাওয়া তুলনামূলকভাবে শীতল থাকে। আবহাওয়া বিবেচনায় এই মাসগুলো উমরাহ পালনের জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক সময় হিসেবে গণ্য হয়। হাজীদের এই সময়ে উমরাহ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

Preferable time for umara practice 02

নিরিবিলি পরিবেশে উমরাহ্: অনেকেই ভিড় এড়িয়ে নিরিবিলি পরিবেশে উমরাহ পালন করতে চান। তাদের জন্য পরামর্শ হল, পিক সিজন যেমন নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি এবং রমজান মাস ছাড়া অন্য সময়ে উমরাহ করতে যাওয়া। রমজান এবং শীতকালে মক্কায় প্রচণ্ড ভিড় থাকে, এজন্য এই সময়ে নিরিবিলি উমরাহ পালন করা কঠিন হয়ে যায়।

কম খরচে উমরাহ: প্রত্যেক মুসলিমের মনেই আল্লাহর ঘর দর্শনের স্বপ্ন থাকে, কিন্তু অর্থনৈতিক কারণে অনেকের স্বপ্ন পূরণ হয় না। শীতকালে সৌদি আরবে সবকিছুর দাম অনেক বেড়ে যায়। রমজানে জিনিসপত্রের দাম খুব বেশি না বাড়লেও, হোটেল ভাড়া এবং ট্রান্সপোর্ট খরচ অনেক বেড়ে যায়। যারা অর্থনৈতিক বিষয়টি বিবেচনা করেন, তাদের জন্য শীতকাল এবং রমজান মাস উমরাহ পালনের সুবিধাজনক সময় নয়। কম খরচে উমরাহ করতে হলে হাজীদের পিক সিজন এড়িয়ে চলা উচিৎ।

এই বিষয়গুলো বিবেচনা করে, হাজীগন তাদের উমরাহ যাত্রার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়টি নির্বাচন করতে পারেন, যা তাদের জন্য আরামদায়ক এবং সন্তোষজনক অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করবে।

উমরাহ পালনের সেরা সময়

قَالَ ‏”‏ فَإِذَا كَانَ رَمَضَانُ اعْتَمِرِي فِيهِ فَإِنَّ عُمْرَةً فِي رَمَضَانَ حَجَّةٌ ‏” নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “রমাদান এলে উমরাহ পালন করো। কেননা, রমাদানের একটি উমরাহ একটি হজের সমতুল্য।

উমরাহ পালনে যেসব কাজ করতে হয়

নিয়ত করা

ইহরাম পরিধান করা

তাওয়াফ করা

সাঈ করা

চুল ছোট করা বা মাথা মুন্ডন করা

বাংলাদেশ থেকে উমরাহ পালন

বাংলাদেশে অনেক হজ্জ এজেন্সি আছে, যারা উমরাহ পালনে আগ্রহী মুসল্লিদের জন্য সব ধরনের সেবা প্রদান করে থাকে। এর মধ্যে ‘ফ্লাই টু হারামাইন’ একটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই এজেন্সি যে সেবাগুলি প্রদান করে, তা হলো:

উমরাহ ভিসা প্রসেসিং

হোটেল বুকিং

মক্কা-মদিনার দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন করানো

উমরাহ ট্রেনিং প্রদান

সাশ্রয়ী মূল্যে উমরাহ