উমরাহ সম্পর্কিত শারীয়াহ বিধি-বিধান

উমরাহ একটি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ আমল হলেও এটি নিয়মিতভাবে পালন করা হয় না। অনিয়মিতভাবে পালন করার কারনে এর বিধি-বিধান গুলো আমরা অনেকেই ভুলে যাই। উমরাহ’র সফর শুরু করার আগে এর বিধি-বিধান সম্পর্কে জেনে নেয়া জরুরী। পবিত্র উমরাহ পালনের বিধি-বিধান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো আজকের এই আর্টিকেলে।

হোম
ব্লগ

বাংলাদেশ থেকে এক সফরে একাধিক উমরাহ করার বিধান কি?

বাংলাদেশ থেকে একই সফরে একাধিক উমরাহ করা যাবে। দূরবর্তী দেশ থেকে আসা উমরাকারীদের জন্য আলিমগণ বলেন:

وقد يرخص لمن كان بمكة في الخروج إلى التنعيم ليحرم بعمرة عن غيره إذا كان قد جاء من بلاد بعيدة يحتاج إلى تأشيرة ونفقات كثيرة لدخول بلاد الحرمين الشريفين ، ولا يدري هل سيتيسر له ذلك أم لا؟

Umrah form Bangladesh 01

যদি কেউ দূরবর্তী দেশ থেকে মক্কায় আসেন এবং পবিত্র হারামাইনে প্রবেশের জন্য ভিসা ও প্রচুর খরচের প্রয়োজন হয়, তবে এমন উমরাকারীদের তানঈম থেকে ইহরাম বাঁধার অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। কেননা, তারা জানে না ভবিষ্যতে আবার উমরাহ পালন করা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে কি-না।” [ইসলাম সাওয়াল জাওয়াব, ১৩৪২৭৬]

বারবার উমরাহ পালন সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে,

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ تَابِعُوا بَيْنَ الْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ فَإِنَّهُمَا يَنْفِيَانِ الْفَقْرَ وَالذُّنُوبَ كَمَا يَنْفِي الْكِيرُ خَبَثَ الْحَدِيدِ وَالذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَلَيْسَ لِلْحَجَّةِ الْمَبْرُورَةِ ثَوَابٌ إِلاَّ الْجَنَّةُ ‏”

“প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেন, তোমরা নিয়মিত হজ ও উমরাহ পালন করতে থাকো। দরিদ্রতা ও গুনাহ দূর করে দেয় এই দুটি আমল। ঠিক যেমনভাবে উত্তপ্ত আগুন লোহা ও সোনা-রুপার ময়লা-মরিচিকা দূর করে দেয়। জান্নাতই হলো একটি কবুল হজের উত্তম প্রতিদান। আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত।” [তিরমিজী, আস-সুনান, ৮০৮]

এ থেকে আমরা বুঝতে পারছি যে, বাংলাদেশ থেকে উমরাহ সফরে থাকা হাজীরা চাইলে একাধিক উমরাহ পালন করতে পারেন।

মাথা মুন্ডন এর সময় সীমা কত দিন? বিলম্ব হলে কি উমরাহ’য় কোনো সমস্যা হবে?

উমরাহতে মাথা মুন্ডন করাকে আরবীতে বলা হয় ‘আল-হালক’ (الحلق) এবং চুল খাটো করাকে বলা হয় ‘আত-তাকছির’ (التقصير)। মুণ্ডন বা চুল খাটো করে ইহরাম থেকে বের হওয়ার প্রক্রিয়াকে ‘আত-তাহলিল’ (التحليل) বলা হয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এ দুটি বিষয় একসাথে উল্লেখ করে আল্লাহ্‌তাআলা বলেন,

لَتَدۡخُلُنَّ الۡمَسۡجِدَ الۡحَرَامَ اِنۡ شَآءَ اللّٰهُ اٰمِنِیۡنَ ۙ مُحَلِّقِیۡنَ رُءُوۡسَکُمۡ وَ مُقَصِّرِیۡن

“তোমরা ইনশাআল্লাহ নিরাপদে তোমাদের মাথার মুন্ডন করে এবং চুল ছেঁটে নির্ভয়ে আল-মাসজিদুল হারামে অবশ্যই প্রবেশ করবে।” [আল-কুরআন, সূরা ফাতহ: ২৭]

Save your head for umrah

আব্দুল্লাহ ইবন উমর (রা.) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন,

وَمَنْ لَمْ يَكُنْ مِنْكُمْ أَهْدَى فَلْيَطُفْ بِالْبَيْتِ وَبِالصَّفَا وَالْمَرْوَةِ وَلْيُقَصِّرْ وَلْيَحْلِلْ

আর যারা তোমাদের মধ্যে কুরবানীর পশু সাথে আনেনি, তারা বায়তুল্লাহ তাওয়াফ এবং সাফা-মারওয়াতে সাঈ করে, চুল খাটো করে ইহরাম খুলে ফেলবে।[আবূ দাউদ, আস-সুনান, ১৮০৫]

أَحِلُّوا مِنْ إِحْرَامِكُمْ بِطَوَافِ الْبَيْتِ وَبَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ وَقَصِّرُوا

বাইতুল্লাহ’র তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়া’র সা‘ঈ সমাপ্ত করে তোমরা ইহরাম ভঙ্গ করো এবং হালাল হয়ে যাও, এবং চুল ছোট করো। [বুখারী, আস-সহীহ, ১৫৬৮]

মাথামুণ্ডন বা চুল খাটো করার মাধ্যমে ইহরাম থেকে ‘আত-তাহলিল’ (التحليل) হওয়া ওয়াজিব। যতো দ্রুত সম্ভব হালাল হয়ে যাওয়া উত্তম, যাতে কোনো নিষিদ্ধ কাজ সংঘঠিত না হয়। তবে বিলম্ব হলে শরীয়াহ’র দিক থেকে কোনো সমস্যা নেই।

উমরাহ এর ক্ষেত্রে পুরষদের মাথা মুন্ডনের নয়ম কি?  

পবিত্র কুরআনে ইহরাম থেকে হালাল হওয়ার জন্য চুল কাটার দু‘টি পদ্ধতি একসাথে উল্লেখ করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

تَدۡخُلُنَّ الۡمَسۡجِدَ الۡحَرَامَ اِنۡ شَآءَ اللّٰهُ اٰمِنِیۡنَ ۙ مُحَلِّقِیۡنَ رُءُوۡسَکُمۡ وَ مُقَصِّرِیۡن

“তোমরা ইনশাআল্লাহ নিরাপদে তোমাদের মাথার মুন্ডন করে এবং চুল ছেঁটে নির্ভয়ে আল-মাসজিদুল হারামে অবশ্যই প্রবেশ করবে।” [আল-কুরআন, সূরা ফাতহ: ২৭]

মাথামুণ্ডন বা চুল ছোট করার প্রভাবটা মাথার উপর স্পষ্টভাবে দেখা যেতে হবে। মাথার কিছু অংশ ক্ষুর দিয়ে ভালভাবে মুণ্ডন করা এবং অবশিষ্ট অংশ রেখে দেয়া কিংবা এক-দুই বা তিনটি চুল কাটলে হবে না। রাসূলুল্লাহ (সা.) চুল কাটার জাহিলী পদ্ধতি ‘আল-কাযা’ (القزع) থেকে নিষেধ করেছেন। ইবন উমর (রা.) বলেন,

عَنِ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم رَأَى غُلَامًا قَدْ حُلِقَ بَعْضُ رَأْسِهِ وَتُرِكَ بَعْضُه، فَنَهَاهُمْ عَنْ ذَلِكَ، وَقَالَ: “احْلِقُوا كُلَّه، أَوْ ذَرُوا كُلَّهُ”

“রাসূলুল্লাহ (সা.) একটি শিশুর মাথা মুণ্ডন করতে দেখলেন যে, তার কিছু অংশ মুণ্ডন করছে আর কিছু অংশ অবশিষ্ট রেখে দেয়া হচ্ছে। তিনি তা দেখে নিষেধ করলেন এবং বললেন, ‘হয় পুরো মুণ্ডন করো অথবা পুরো রেখে দাও।” [আব্দুর রাজ্জাক, আল-মুসান্নাফ, ২০৬২০]

তাই কেউ যদি মুণ্ডন করতে চায় তাহলে গোটা মাথার চুল মুণ্ডন করবে। আর যদি চুল ছোট করতে চায় তাহলে সম্পূর্ণ মাথার চুল ছোট করবে।

নারী উমরাহকারীর চুল কাটার করার নিয়ম কী?

নারীদের জন্য আল-হলক বা মুণ্ডন করার নিয়ম নেই। নারীদের ক্ষেত্রে চুলের গোছা থেকে হাতের আঙুলের এক কর পরিমাণ চুল কেটে ফেলাই যথেষ্ট। ইবন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন,

لَيْسَ عَلَى النِّسَاءِ الْحَلْقُ ، وَإِنَّمَا عَلَى النِّسَاءِ التَّقْصِيْرُ.

“নারীদের ব্যাপারে মাথা মুণ্ডনের বিধান নেই, তাদের ওপর রয়েছে ছোট করার বিধান”। [আবূ দাউদ, আস-সুনান, ১৯৮৫]

আলী (রা.) থেকে বর্ণিত,

هَى رَسُوْلُ الله صلى الله عليه وسلم أَنْ تَحْلِقَ الْمَرْأَةُ رَأْسَهَا.

“রাসলুল্লহ (সা.) নারীকে মাথা মুণ্ডন করতে নিষেধ করেছেন।” [তিরমিজি, আস-সুনান, ৯১৫]

সুতরাং মহিলাদের ক্ষেত্রে নিয়ম হচ্ছে, তারা তাদের মাথার সব চুল একত্রে ধরে অথবা প্রতিটি বেণী থেকে এক আঙুলের প্রথম কর পরিমাণ কাটলে যথেষ্ট হবে।

টাক মাথার মুণ্ডন কি অপরিহার্য?

কারো টাক মাথা থাকলে মাথায় ব্লেড বা ক্ষুর চালিয়ে দিলে ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। অনুরূপভাবে কারো মাথায় চুল এক-দু’দিন পুর্বে মুণ্ডন করায় চুল না থাকলেও সে শুধু ব্লেড বা ক্ষুর বিংবা চুল কাটার মেশিন দিয়ে পুরো মাথায় ঘুরিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে ‘ওয়াজিব’ আদায় করবে। [ফতোয়ায়ে আলমগিরি, ১/১৪৯]

দ্বিতীয়বার উমরাহ করার সময় মাথা মুণ্ডন করার নিয়ম কি?

প্রথম উমরাহ’র হলকে চুল মুণ্ডন করায় দ্বিতীয় উমরাহ’র হলকে মুণ্ডন প্রয়োজন নেই এমন নয়। চুল এক-দু’দিন পুর্বে মুণ্ডন করায় মাথায় চুল না থাকলেও শুধু ব্লেড কিংবা ক্ষুর বা চুল কাটার মেশিন দিয়ে পুরো মাথায় ঘুরিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে ‘ওয়াজিব’ আদায় করতে হবে। [ফতোয়ায়ে আলমগিরি, ১/১৪৯]

উমরাহ’র পর বগল ও অন্যান্য লোম কি পরিস্কার করতে হবে?

মাথা মুণ্ডনের পর শরীরের অন্যান্য অংশের অবিন্যস্ত অবস্থা দূর করা সুন্নত। তবে হালাল হওয়ার জন্য তা শর্ত নয়। বগল ও নাভির নিচের লোম পরিষ্কার করাও বাঞ্ছনীয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وليَقْضُوْا تَفَثَهُمْ

“এবং তারা যেন তাদের ময়লা পরিষ্কার করে।” [আল-কুরআন, সূরা হজ:২৯]

রাসূলুল্লাহ (সা.) নখ কেটেছিলেন। [সাইয়িদ আস-সাবিক, ফিকহু আস-সুন্নাহ, ১/৭৪৩] এবং ইবন উমর (রা.) হজ অথবা উমরাহ’র পর গোঁফ কাটতেন। [বাইহাকি, আস-সুনান আল-কুবরা, ৯১৮৬]

মাথা মুণ্ডনের কোনো সুন্নাহসম্মত পদ্ধতি আছে কী?

ডান দিক থেকে মাথা মুণ্ডন করা সুন্নাহ। রাসূলুল্লাহ (সা.) হজে স্বীয় মাথা মোবারক ডান দিকে থেকে মুণ্ডন করেছেন।

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَتَى مِنًى، فَأَتَى الْجَمْرَةَ فَرَمَاهَا، ثُمَّ أَتَى مَنْزِلَهُ بِمِنًى وَنَحَرَ، ثُمَّ قَالَ: لِلْحَلَّاقِ خُذْ، وَأَشَارَ إِلَى جَانِبِهِ الْأَيْمَنِ، ثُمَّ الْأَيْسَرِ، ثُمَّ جَعَلَ يُعْطِيهِ النَّاسَ

আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) মিনায় এলেন এবং জামরাতে পাথর নিক্ষেপ করলেন। এরপর তিনি মিনায় তাঁর অবস্থানের স্থানে ফিরে এলেন এবং কুরবানী করলেন। তারপর নাপিতকে ডেকে বললেন, “নাও।” তিনি (মাথার) ডান দিকে হাত দিয়ে ইশারা করলেন, তারপর বাম দিকে। পরে সেই চুল লোকদের মধ্যে বিতরণ করলেন।’ [মুসলিম, আস-সহীহ, ৩০২২]

সুতরাং রাসূলুল্লাহর (সা.) সুন্নাহ অনুযায়ী ডান দিকের চুল আগে এবং বাম দিকের চুল পরে মুণ্ডন করা সুন্নাহ।

তওয়াফের পর সাঈ করার পূর্বে মাসিক শুরু হলে মহিলাদের করণীয় কি?

“তাওয়াফের পর সাঈ করার আগে মাসিক শুরু হলে, সাঈ করে নিতে হবে। সাঈর জন্য পবিত্রতা শর্ত নয় এবং সাঈর স্থান মসজিদের অংশ নয়। তাই সেখানে থাকা ও অপেক্ষা করা যাবে। [ফাতাওয়া ইবন উসাইমীন, ২/২৩৯]”

বর্তমানে মহিলাদের মাসিক সাময়িকভাবে আটকে দেয়া বা পিছিয়ে দেয়ার জন্য নিরাপদ চিকিৎসা ও ঔষধ পাওয়া যায়। বিশ্বস্ত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উমরাহ’র জন্য পরিকল্পিত সময়ে মাসিক আটকে দেয়া বা পিছিয়ে দেয়া বৈধ হবে। [ফাতাওয়া ইবন উসাইমীন, ২/১৮৫]

উমরাহ’র নিয়ত কি ভাবে করবো?

ইহরামের দুটি অংশ রয়েছে: এক, ইহরামের কাপড় পরা; দুই, উমরার জন্য ‘লাব্বাইকা ওমরাতান’ (لَبَّيْك عُمْرَةً) এবং হজের জন্য ‘লাব্বাইকা হাজ্জান’ (لَبَّيْك حَجً) বলে প্রথম তালবিয়া পাঠ করা। ইবন উমর (রা.) বর্ণিত প্রসিদ্ধ তালবিয়াটি হচ্ছে,

لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لاَ شَرِيكَ لَك

“(লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারীকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নি‘মাতা লাকা ওয়াল মুল্ক, লা শারীকা লাক) “আমি হাজির, হে আল্লাহ, আমি হাজির। তোমার কোনো শরীক নেই, আমি হাজির। নিশ্চয় যাবতীয় প্রশংসা ও নিয়ামত তোমার, এবং রাজত্বও তোমার। তোমার কোনো শরীক নেই।” [বুখারী, আস-সহীহ, ৫৪৬০]

আবূ হুরাইরা (রা.)-এর বর্ণনা অনুযায়ী, তালবিয়ায় রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন لَبَّيْكَ إِلهَ اْلَحقِّ لَبَّيْكَ (লাব্বাইকা ইলাহাল হাক্কি লাব্বাইক) “আমি হাজির, সত্য ইলাহ! আমি হাজির’। [ইবন মাজাহ, আস-সুনান, ২৯২০] ইবন উমর (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলতেন,

لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ وَالْخَيْرُ بِيَدَيْكَ لَبَّيْكَ وَالرَّغْبَاءُ إِلَيْكَ وَالْعَمَلُ.

(লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা ওয়া সা‘দাইক, ওয়াল খইরু বিইয়াদাইক, লাব্বাইকা ওয়ার রগবাউ ইলাইকা ওয়াল আমল) ‘আমি হাজির, হে আল্লাহ, আমি হাজির। আমি হাজির, একমাত্র তোমারই সন্তুষ্টির জন্য। যাবতীয় কল্যাণ তোমার হাতে, আমল ও প্রেরণা তোমারই কাছে সমর্পিত।’ [মুসলিম, আস-সহীহ, ১১৮৪]

উপরোক্ত তালবিয়াগুলি পাঠ করলে কোন সমস্যা নেই। তবে রাসূলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবীদের ব্যবহৃত শব্দমালার বাইরে যাওয়া যাবে না।

একজন ব্যাক্তি এক সফরে কয়বার উমরাহ করতে পারেন?

একজন ব্যাক্তি এক সফরে যতবার ইচ্ছা উমরাহ করতে পারেন। দূরবর্তী দেশ থেকে সফর করে আসা উমরাকারীদের ক্ষেত্রে আলিমগণ বলেন,

وقد يرخص لمن كان بمكة في الخروج إلى التنعيم ليحرم بعمرة عن غيره إذا كان قد جاء من بلاد بعيدة يحتاج إلى تأشيرة ونفقات كثيرة لدخول بلاد الحرمين الشريفين ، ولا يدري هل سيتيسر له ذلك أم لا؟

“যদি কেউ দূরবর্তী দেশ থেকে মক্কায় আসেন এবং পবিত্র হারামাইনে প্রবেশের জন্য ভিসা ও প্রচুর খরচের প্রয়োজন হয়, তবে এমন উমরাকারীদের তানঈম থেকে ইহরাম বাঁধার অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। কেননা, তারা জানে না ভবিষ্যতে আবার উমরাহ পালন করা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে কি-না।” [ইসলাম সাওয়াল জাওয়াব, ১৩৪২৭৬]

Umrah Travel

বারবার উমরাহ পালন সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে,

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ تَابِعُوا بَيْنَ الْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ فَإِنَّهُمَا يَنْفِيَانِ الْفَقْرَ وَالذُّنُوبَ كَمَا يَنْفِي الْكِيرُ خَبَثَ الْحَدِيدِ وَالذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَلَيْسَ لِلْحَجَّةِ الْمَبْرُورَةِ ثَوَابٌ إِلاَّ الْجَنَّةُ ‏”

“আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমরা ধারাবাহিক হজ ও উমরাহ আদায় করতে থাকো। এ দুটো আমল দারিদ্র ও গুনাহ এমনভাবে বিদূরিত করে দেয়, যেভাবে ভাটার আগুন লোহা ও সোনা-রূপার ময়লা-জং দূরিভূত করে। একটি কবুল হজ্জের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়।” [তিরমিজী, আস-সুনান, ৮০৮]

তাই বাংলাদেশ থেকে উমরার সফরে থাকা হাজীগণ ইচ্ছা করলে একাধিক উমরাহ করতে পারেন।

এক সফরে একাধিক উমরাহ করা যাবে কিনা?

এক সফরে একাধিক উমরাহ করা যাবে। বারবার উমরাহ পালন সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে,

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ تَابِعُوا بَيْنَ الْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ فَإِنَّهُمَا يَنْفِيَانِ الْفَقْرَ وَالذُّنُوبَ كَمَا يَنْفِي الْكِيرُ خَبَثَ الْحَدِيدِ وَالذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَلَيْسَ لِلْحَجَّةِ الْمَبْرُورَةِ ثَوَابٌ إِلاَّ الْجَنَّةُ ‏”

“প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেন, তোমরা নিয়মিত হজ ও উমরাহ পালন করতে থাকো। দরিদ্রতা ও গুনাহ দূর করে দেয় এই দুটি আমল। ঠিক যেমনভাবে উত্তপ্ত আগুন লোহা ও সোনা-রুপার ময়লা-মরিচিকা দূর করে দেয়। জান্নাতই হলো একটি কবুল হজের উত্তম প্রতিদান। আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত।” [তিরমিজী, আস-সুনান, ৮০৮]

দূরবর্তী দেশ থেকে সফর করে আসা উমরাহকারীদের ক্ষেত্রে আলিমগণ বলেন,

وقد يرخص لمن كان بمكة في الخروج إلى التنعيم ليحرم بعمرة عن غيره إذا كان قد جاء من بلاد بعيدة يحتاج إلى تأشيرة ونفقات كثيرة لدخول بلاد الحرمين الشريفين ، ولا يدري هل سيتيسر له ذلك أم لا؟

“কেউ যদি দূরবর্তী কোনো দেশ থেকে মক্কায় আসেন এবং পবিত্র হারামাইনের দেশে প্রবেশের জন্য ভিসা এবং প্রচুর খরচের প্রয়োজন হয়, তবে এমন উমরাকারীর জন্য তানঈম থেকে ইহরাম বাঁধার অনুমতির ক্ষেত্রে তাকে ছাড় দেওয়া যায়। কেননা, সে জানে না আর উমরা পালন করা তার পক্ষে সম্ভব হবে কি-না?” [ইসলাম সাওয়াল জাওয়াব, ১৩৪২৭৬]

তাই বাংলাদেশ থেকে উমরার সফরে থাকা হাজ্জীরা ইচ্ছা করলে একাধিক উমরাহ করতে পারেন।

এক সফরে একাধিক বার উমরাহ করা উত্তম নাকি বেশি করে তওয়াফ করা উত্তম এবং তওয়াফের ফজিলত কি?

এক সফরে একাধিক উমরাহ করা যাবে। আবার বেশি বেশি কাবা তাওয়াফ একটি উত্তম আমল। তাওয়াফের ফজিলত সম্পের্ক আবদুল্লাহ ইবন উমর (রা.) হতে বর্ণিত,

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ يَقُولُ ‏ “‏مَنْ طَافَ بِالْبَيْتِ وَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ كَانَ كَعِتْقِ رَقَبَةٍ ‏”‏

“তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, “যে ব্যক্তি বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করে এবং দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করে, সে একজন ক্রীতদাসকে মুক্ত করার সমতুল্য সওয়াব পায়।”’’ [ইবন মাজাহ, আস-সুনান, ২৯৫৬]

إِذَا ‌طُفْتَ ‌بِالْبَيْتِ، خَرَجْتَ مِنْ ذُنُوبِكَ كَيَوْمِ وَلَدَتْكَ أُمُّكَ

“তুমি যখন বাইতুল্লাহ তাওয়াফ কর, পাপ থেকে এমনভাবে মুক্ত হও, যেমন আজই তোমার মাতা তোমাকে জন্ম দিয়েছেন।” [আব্দুর রাজ্জাক, আল-মুসান্নাফ, ৯১১০]

যার ইচ্ছা সে একাধিক উমরাহ করবে। যার ইচ্ছা বেশি বেশি তাওয়াফ করবে। দু‘টি আমলের আলাদা আলাদা গুরুত্ব রয়েছে।

রুকনু ইয়ামানীর বিধান কী? চুম্বন না—কি হাত দিয়ে স্পর্শ?

না, চুম্বন নয়; বরং হাত দিয়ে স্পর্শ করা মুস্তাহাব।